মোঃ মুজাহিদুল ইসলামঃ
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নগদ কোম্পানির ডিষ্টিবিউটরের কাছ থেকে র্যাব পরিচয়ে এক কোটি আট লক্ষ এগার হাজার টাকা ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং নগদ ২২ লক্ষ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত ১২ লক্ষ টাকা ও ১ টি হাইয়েস গাড়িসহ দূধর্ষ ডাকাত দলে সক্রীয় ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ও ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। মাঃ হাসান (৩৫) ২। গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০) ৩। শেখ মোঃজালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩) ৪। মোঃ ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও ৫। মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭) বুধবার (১৮ই জুন ২০২৫ ইং.) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানা সুত্রে জানা যায়, গত ১৪ই জুন২০২৫ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ৮:৫৫ ঘটিকায় নগদের কোম্পানির ডিষ্টিবিউটর জনৈক আঃখালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নং রোডের ৩৭ নং বাসা থেকে উত্তরার প্রতিষ্ঠানে র্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন; নগদ অর্থ ও গাড়িসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
উত্তরা পশ্চিম থানা সুত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন ২০২৫ ইং সকাল আনুমানিক ৮:৫৫ ঘটিকায় নগদ কোম্পানির ডিষ্টিবিউটর জনৈক আঃ খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নং রোডের ৩৭ নং বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কমচারীসহ চার ব্যাগে এক কোটি আট লক্ষ ১১ হাজার টাকা নিয়ে মাটর সাইকেল যোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথি মধ্যে উত্তরা ১২ ও ১৩ নং রোডের সংযোগ স্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে,মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত মুখে কালো কাপড় বাঁধা ৬/৭ জন অকিটকি হাতে নিয়ে নেমে তাদের কাছে আসতে দেখে নগদের টাকা বহনকারী কমচারীরা। টাকার ব্যাগ নিয়ে দাড়ানো ৪ কর্মচারীকে ধাওয়া করে চার ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের ৩ জনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে। ঘটনাস্থল থেকে ১ জন কর্মচারী পালাতে সক্ষম হয়। পরে ডাকাতরা ৩ জনকে তুরাগ থানার ১৭ নং সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে টাকা,অফিসিয়াল মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত ৩ টি মাবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আঃ রহমানের অভিযোগের ভিিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানা জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর উত্তরা পশ্চিম থানা ও ডিবি পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও ডাকাতির টাকা উদ্ধারে তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করে। ঢাকা উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিআইজি) মোঃ মাইদুল ইসলাম এর দিকনির্দেশনায় ও উত্তরা পশ্চিম থানার সুদক্ষ অফিসার ইনচার্জ সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে এক চৌকস দলের সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালককে সনাক্ত করে অতঃপর বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ ইং রাত আনুমানিক ১:৪৫ ঘটিকায় খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের
চালক মোঃ হাসানকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।এ সময় তার হেফাজত হতে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ আট হাজার পাঁচশত টাকা উদ্ধার করা হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে উক্ত ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস বাসটি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি উত্তর বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ডিবি উত্তর বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকার সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে,
পরবর্তিতে উক্ত ডাকাত দলের মুল হোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে বুধবার ১৮ই জুন ২০২৫ ইং রাত আনুমানিক ১০:৪০ ঘটিকায় ঢাকার উত্তরা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়
তার কাছ থেকে লুন্ঠিত তের লক্ষ চৌত্রিশ হাজার পাঁচশত টাকা উদ্ধার করা হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত শাহিনের দওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ ইমদাদুল শরীফকে রাত গগআনুমানিক ১১:৫০ ঘটিকায় আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থকে গ্রেফতার করা হয। এ সময় তার নিকট হতে লুন্ঠিত আট লক্ষ চার হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট
শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন একই দিন রাতে সবুজবাগ এলাকা থকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার নিকট হতে নগদ তেষট্রি হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় প্রদান করে। জালাল ঘটনার পরদিন বার লক্ষ টাকা ঢাকা ব্যাংকের নিজ নামীয় একাউন্টে জমা করে। টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধীন।
ডিবি আরও জানায়, পরবর্তিতে গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাত দলের অপর সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে রাতে এয়ারপোট রেলস্টেশন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে র্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড লেজার সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লগো সম্বোলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন
ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
থানা ও ডিবি সুত্রে জানা যায়, ডাকাত দলের দলনেতা মোঃ মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকুরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট।এই দল দীঘদিন ধরে র্যাব ও পুলিশের পরিচযে় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধীন। মামলার নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যান্য দের গ্রেফতারসহ অবশিষ্ট টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাহাঙ্গীর আলম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত