
দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৭ আগস্ট, ২০২৫) সন্ধ্যায় গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তুহিনের সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং হত্যাকারীদের অবিলম্বে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
ঘটনার বিবরণ
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তুহিন তার বাইসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার পথ আটকায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা তুহিনের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগেই হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা তুহিনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া
এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গাজীপুর প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “সাংবাদিকদের উপর এ ধরনের বর্বর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তুহিন একজন সাহসী ও নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন থাকতে পারে।”
তারা আরও বলেন, “আমরা অবিলম্বে তুহিন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিকরা যদি কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না থাকেন, তাহলে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে তারা কীভাবে কাজ করবেন?”
গাজীপুরের সকল সাংবাদিক সংগঠন এ ঘটনার প্রতিবাদে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি দ্রুত হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত না করা হয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
পুলিশের বক্তব্য
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা একজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছি এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “তুহিনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড পেশাদার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সমাজের সচেতন মহল মনে করে, এ ধরনের অপরাধের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
Discussion about this post