
মশিয়ার রহমান নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
তিস্তার রুপালী চরে বাদাম চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। ধু-ধু চরে বাদাম চাষ করা হয়েছে। বালু চরে ফলন ভালো হওয়ায় বাদাম নিয়ে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা। নিলফামারী জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদীর জেগে উঠা চর ঘুরে দেখা গেছে, চরের পর চর জুড়ে চাষ করা হয়েছে বাদামের। প্রায় প্রতিটি চরেই বেশ ভালো ফলন হয়েছে। সঠিক দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষন পেলে চরাঞ্চলে বাদাম চাষে ভাগ্য বদলে যাবে কৃষকদের। বাদাম হয়ে উঠবে চরাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল।গত দু’দিন নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার তিস্তার বিভিন্ন চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তার বুক চিরে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। রুপালী চর এখন সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে। চাষ করা হয়েছে বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ও রবিশস্য। কৃষকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত এসব ফসলের ক্ষেত। দিগন্ত জুড়ে বাদামের ক্ষেত দেখে মনে হচ্ছে রুপালী চরে যেন সবুজ চাদর বিছানো হয়েছে। মাঝে মাঝে বাদামের সবুজপাতা বাতাসে দোল খেয়ে যেন সবুজ ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। যা দুর থেকে এক অপরূপ শোভা বর্ধন করছে। চরের এসব বাদাম ক্ষেত ঘুরে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি বাদাম ক্ষেতের গাছগুলো বেশ পরিপক্ক হয়ে উঠেছে। ডাল ধরে টান দিলেই মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে থোকা থোকা বাদাম। এ যেন সবুজের সমারোহ। অনেক বাদাম ক্ষেত ইতিমধ্যেই পরিপক্ক হয়ে হলদে রং ধারণ করেছে। আর ক’দিন পরেই কৃষকরা এসব চর থেকে বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে ঘরে নিবেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাদাম চাষ অত্যন্ত সহজ, খরচ কম এবং ঝামেলা নেই। বন্যায় তিস্তার চরগুলোতে পলিমাটি জমে থাকায় এগুলো বাদাম সহ অন্যান্য রবিশস্যের জন্য বেশ উপযোগি হয়েছে। তাই এসব চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী জমিগুলোতে বাদামের ফলন ভালো এবং তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বাদাম চাষে ঝুঁকছেন।চরে বাদাম চাষ করা কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগাম জাতের আলু তুলে চলতি মৌসুমের শুরুতে বাদাম চাষ করা হয়। বীজ বপন থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। রোপণের পর অন্য ফসলের ন্যায় পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। বীজ বপণ ও বাদাম উঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। ফলন মোটামুটি ভালো হলে বিঘা প্রতি ফলন হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ মণ পর্যন্ত বাদাম হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫’শ টাকা দরে। সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি লাভ থাকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো। যা একেবারেই ঝামেলা বিহীন এবং অত্যন্ত কম পরিশ্রমের ফসল।কৃষকদের দাবী, নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চলের কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া হলে তারা বাদাম চাষে আরও বেশি আগ্রহী এবং পারদর্শী হবে। আর এতে করে বাদাম হয়ে উঠবে চরাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল।
Discussion about this post